সোনাঝুরি
আমাকে কেউ যেন বলল, এইটা হলো হাট । মাটির উপরে পসরা রেখে বিকিকিনি করুন যতক্ষণ এই বেলা থাকে। আমার সাঁঝ হয়ে আসে । হাট কখন জানি শেষ হয়ে যায় । ঘরে ফেরাটা একটা বিষণ্ণ বিষয়, যেখানে উপমা লাগিয়ে আনন্দঘন হয়ে আসে ছন্দ , আর তাদের পতন অবশ্যম্ভাবী । হাট যে কোন দিন বসতে পারে, তার মর্জি সাপেক্ষ, মাটি কাছে তার কিছু জিজ্ঞাসা নেই । কিন্তু তার দিনক্ষণ ঠিক করা আছে । কে করেছে আমি জানি না । আমি জানি শুধু দরদাম । দূর থেকে হেঁটে আসা জীবন চরিত্রেরা ঘাম আর ক্লান্তি দিয়ে একটি বিকেল বানায় । আজ কে সাম, রক্ত ঘামের নাম । রক্ত ঘাম জল করা মেহনতি মানুষটার নাম গামছা ।
২ । বিকেল
বিকেল মানে মেঘ করেছে । বিকেল একটি ফেলে আসা বাজার । আপনি মনটা গামছা দিয়ে বাধুন । ঐযে খেজুর গাছ, তাতে ফল নেই । ফল ধরেও না । গাছের পাতার ফাকে যে রোদ উঁকি মারতে লজ্জা পায় । কোথায় যেন বিঁধে যায় । রক্তঝরার কথা খেজুর গাছকে শুনিও না । গাছ লজ্জা পাবে । এছাড়া সোনাঝুরি হাটে ফলের গাছ নেই । ফল আলো দেয়, হাটের নিজস্ব কোন আলো নেই । হাট মানে, বিক্রিবাটার জানালা । অনেক গামছা বিক্রি হবে, গামছার কড়ক নিয়ে গর্ব হবে তন্তুবায়ের । হাট থেকে মাথা উঁচু করে ফিরবে মাকুমানুষ । সব পাখি, সমস্ত নদীরই ঘরে ফেরার কথা ।
৩। মাটি
ঘর মানে ঘর, মাটি মানে মাটি । রাঙা মানে, গোধূলি । গোধূলি মানে বিকেল শেষ হয়ে আসে । এইতো বেচাকেনা । শেষ করে যে যার সবে পুবে চলে যায় । পুব যেখানে শেষ হয়, আর একটি পুবের জন্ম । পশ্চিম একটি বিশেষণ মাত্র । তবুও পশ্চিম পূবকে সংজ্ঞায়িত করে না । বিকেল একটি সময়কাল যতক্ষণ না সন্ধ্যা হয় । সন্ধ্যা মানে দিন শেষ । এই রাঙা মাটির পথ গ্রাম কে পণ্য করে তুলেছে হাট । হাটকে হট্টগোল করেছে দরদাম । দাম মানে , দাম , কক্ষনোই ঘাম নয় । দিন শেষে এই পথে যে বাউলটি উদাস কণ্ঠে গেয়ে গেলো, তার গাওয়াটি মাটি হয়ে গেলো ।
৪। পণ্য
গামছা একটি পণ্য । চরকার অগুন্তি পাকে নিজেকে বেঁধে ফেলেন তন্তুবায় । আর তাঁকে কিনে ফেলেন পশ্চিম । পশ্চিমের আলো বাতাস টের পায়না পূব । পূব বলেন গামছা একটা সাবজেক্ট । তাঁকে বুনে ফেলা যায় । বাজার বলছে । পূর্বপশ্চিম বলছে । অক্ষৌহিনি পূর্বপশ্চিম যাওয়া আসা একটি বিষয় বস্তু, হাটকে আমরা বলেছি । দরদামকে বলেছি ফর্ম ।
৫। হাট
পণ্যকে বিশ্রাম আর হাটকে নির্জন করে দোকানীরা ঘরে ফিরে গেছে । যেটুকু বিক্রি আর যেটুকু মূল্য নিয়ে নিজের নিজের অন্ধকারে হিসাব করছেন বিক্রেতা । যথাস্থানে শোণিত ক্ষত নিয়ে এই একতরফা লাল । নিস্তব্ধ রাঙা মাটির স্বদেশ নিয়ে পোড়া জ্যোৎস্না নেমেছে । ঔ গাছের পাতায় চিকিমিকি নক্ষত্রেরা অক্ষৌহিনি । হাট, তারকাছে কোন হিসাব চায় না । হাটের কাছে এই হলো কন্টেন্ট , এইটুকুই তার সঞ্চয় । হাট তার এইটুকুই অহং নিয়ে গামছার গন্ধে মাতাল হয়ে ওঠে ।
পণ্য পরিক্রমা। একটু ভিন্ন পী্যূষ।
ReplyDeleteঅন্য স্বাদের...
ReplyDeleteঅন্যরকম করে দেখা।গল্প বলার ঢঙে কবিতা বলা।
ReplyDelete